শিরোনাম :
বড় ছেলে জিহাদ এর জন্মদিনে বাবা শামসুর অনুভূতি! মিথ্যা পরিচয়ে ফ্ল্যাট ভাড়া নেন আরসা নেতা আতাউল্লাহ গুম কমিশনে গিয়ে তথ্য দিলেন সাবেক সেনাপ্রধান ইকবাল করিম ভূঁইয়া বঙ্গবন্ধু সৈনিকলীগ নেতা ফেরদৌস কে আইনের আওতায় আনার দাবী অপহরণ নাটক সাজিয়ে টেকনাফে সাংবাদিকসহ ছয় জনের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা  সাবেক এমপি বদির সঙ্গে বিরোধে ক্রসফায়ারে খুন কাউন্সিলর একরাম টেকনাফের মাদক কারবারি জাহাঙ্গীর অ’স্ত্রসহ গ্রেফতার কোস্ট গার্ড-ডাকাতদলের গোলাগুলি, অস্ত্র-গুলিসহ একজন আটক পালংখালী জামায়াতের ইফতার মাহফিল সম্পন্ন কক্সবাজার কারাগারের জেলার আবু মুছার নেতৃত্বে চলছে দুর্নীতির মহোৎসব! 
শুক্রবার, ২১ মার্চ ২০২৫, ০৬:৪৪ পূর্বাহ্ন
বিজ্ঞপ্তি :
আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম.... বিশ্বের যে কোন স্থান থেকে সকল প্রকার সংবাদ পেতে আমাদের ওয়েবসাইট www.teknaftv.com ভিজিট করুন। ধন্যবাদ!

‘ওয়ান-ইলেভেনে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকায় বড় ভুল ছিল’

আন্তর্জাতিক ডেস্ক / ২৭ বার দেখা হয়েছে
আপডেট সময় : রবিবার, ৯ মার্চ, ২০২৫

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক কূটনীতিক জন এফ ড্যানিলোভিচ বলেছেন, ২০০৭-০৮ সালে ওয়ান-ইলেভেনে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের নীতি এবং ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের ভূমিকায় ‘বিরাট ভুল’ ছিল। ওই সময় বাংলাদেশের মানুষ ও সংস্কারের পরিবর্তে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ওপর জোর দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র।

বাংলাদেশে দায়িত্ব পালনকারী যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক উপরাষ্ট্রদূত ড্যানিলোভিচ শনিবার (৮ মার্চ) এক আলোচনায় এমন মন্তব্য করেন।

 

‘নতুন ভোরের পথে ঢাকা: গণ-অভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের নতুন গতিপথ’ শীর্ষক ওই আলোচনার আয়োজন করে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস)। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) মিলনায়তনে ওই আলোচনায় অংশ নেন বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত উইলিয়াম বি মাইলাম এবং সাবেক উপরাষ্ট্রদূত জন এফ ড্যানিলোভিচ।

সিজিএসের নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমানের সঞ্চালনায় আলোচনা অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তৃতা করেন সংস্থার চেয়ারম্যান মুনিরা খান। এরপর সঞ্চালকের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক দুই কূটনীতিক। অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে অতিথিদের প্রশ্নের উত্তর দেন তারা।

 

আলোচনায় সাবেক দুই যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতিক বাংলাদেশে গণতন্ত্রের প্রতি তাদের দেশের দীর্ঘস্থায়ী প্রতিশ্রুতি নিয়ে মতামত ব্যক্ত করেছেন। তারা বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে সমর্থন করতে আন্তর্জাতিক অংশীদারত্বের ভূমিকা এবং নীতিগত দৃষ্টিভঙ্গির ওপর আলোকপাত করেন।

জন এফ ড্যানিলোভিচ বলেন, “আমি প্রথম স্বীকার করছি ২০০৭-০৮ সালে যুক্তরাষ্ট্র বিরাট ভুল করেছিল। তবে রাষ্ট্রদূত প্যাট্রিসিয়া বিউটেনিস কিংবা আমার সহকর্মীরা এক-এগারো ঘটাননি। আমি মনে করি না, কোনো গোপন ‘কফি গ্রুপ’ সিদ্ধান্ত নিয়ে তা বাংলাদেশের জনগণকে বাস্তবায়ন করার নির্দেশ দিয়েছিল। ১৯৯০ সালে গণতন্ত্রের যে অঙ্গীকার করা হয়েছিল, তা থেকে বিচ্যুতি ঘটেছিল। বাংলাদেশকে গণতন্ত্রের পথে ফিরিয়ে আনতে হলে মৌলিক সংস্কার দরকার। তখন জেনারেল ও ব্রিগেডিয়ারদের মতকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল। বাংলাদেশের জনগণ কী চায়, তাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়নি। আমরা নাগরিক সমাজ রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কথা বলেছি। আমরা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সঙ্গে কথা বলেছি। কিন্তু আমরা সেনাবাহিনীর কথাই বেশি শুনেছি। সম্ভবত সে কারণেই গণতন্ত্রের উত্তরণ নিয়ে যে প্রত্যাশা ছিল তা বাস্তবায়িত হয়নি।”

 

জন এফ ড্যানিলোভিচ জোর দিয়ে বলেছেন, ২০২৪-এর জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের কৃতিত্ব কেবল বাংলাদেশের জনগণের। আন্দোলনটি সম্পূর্ণরূপে স্বদেশেই সৃষ্ট হয়েছিল। যার ফলে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হন। তিনি বলেন, ‘এতে (অভ্যুত্থান) এমন কিছু ছিল যা বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছিল। এটি বাংলাদেশে উত্থিত হয় এবং বাংলাদেশেই সফল হয়। পূর্ববর্তী স্বৈরশাসনের অবসান এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার এই চতুর্থ সুযোগের জন্য কেবল বাংলাদেশের জনগণই কৃতিত্বের দাবিদার।’

 

পরবর্তী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে, ড্যানিলোভিচ বলেন, ‘সিদ্ধান্তটি কেবল বাংলাদেশের জনগণের ওপর নির্ভরশীল।’ তিনি বলেন ‘এটি এমন একটি প্রশ্ন যার উত্তর বাংলাদেশের জনগণকে দিতে হবে। আমি স্বীকার করি, আমার কাছে এটিই বাংলাদেশে এখন সবচেয়ে কঠিন প্রশ্ন।’ জবাবদিহির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে অংশগ্রহণই জবাবদিহির একমাত্র পরিমাপ নয়। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রক্রিয়া এবং ব্যক্তিদের জবাবদিহি করার জন্য আইনি ব্যবস্থাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’

 

উইলিয়াম বি মাইলাম বলেন, ‘আমরা একটি ছোট সংগঠন গঠন করি এবং বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের জনগণকে সচেতন করার জন্য কাজ করি। গত পাঁচ বছরে আমরা অর্থায়নের ব্যবস্থা করেছি এবং এই উদ্যোগকে সমর্থন করার জন্য কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। বাংলাদেশে আসতে পেরে আমি আনন্দিত। বিশেষ করে গত ১০ বছরে ভিসা না পাওয়ায় আমি বাংলাদেশ সফর করতে পারিনি।’

 

বাসস জানায়, ড্যানিলোভিচ গণতান্ত্রিক স্থিতিশীলতার ওপর জোর দিয়ে বলেন, ‘১৯৭১ সাল থেকে বাংলাদেশের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের নীতির ধারাবাহিকতা রয়েছে।’ বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন দলগুলোর মধ্যে জবাবদিহির অভাবকে দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে একটি হিসেবে চিহ্নিত করেন তিনি। ড্যানিলোভিচ বলেন, ‘গণতন্ত্রের বিকাশের জন্য শক্তিশালী বেসামরিক-সামরিক সম্পর্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কর্তৃত্ববাদী শাসন কখনোই গণতান্ত্রিক শাসনের জন্য সহায়ক নয়।’

 

বাংলাদেশ বর্তমানে একটি ‘তথ্য যুদ্ধ’ চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি এবং যুক্তরাষ্ট্র সরকার মিডিয়া-চালিত ভুল তথ্য মোকাবিলায় সক্রিয়ভাবে কাজ করছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। তিনি বাংলাদেশের নির্দিষ্ট ব্যক্তিদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়ন সম্পর্কে রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের বক্তব্যকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক অস্থিতিশীল করার চেষ্টাকারী গোষ্ঠীগুলো দ্বারা প্রচারিত বিভ্রান্তিকর প্রচেষ্টা বলে উড়িয়ে দেন।

 

সেন্ট মার্টিন দ্বীপে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক তৎপরতা সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করে ড্যানিলোভিচ এই ধরনের দাবিকে বিদ্বেষপূর্ণ উদ্দেশ্যে ছড়িয়ে দেওয়া ভিত্তিহীন গুজব বলে অভিহিত করেছেন। তিনি সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারকে তাদের দুর্নীতি ও অনিয়ম ঢাকতে বিদেশি দেশগুলোর বিরুদ্ধে ভুল তথ্য ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগও করেন।

 

ড্যানিলোভিচ জোর দিয়ে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের উচিত তাদের তহবিল নীতিগুলোকে বাংলাদেশের চলমান সংস্কারের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করা।’ একটি সক্রিয় নাগরিক সমাজের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়ে বলেন, ‘বাংলাদেশের উচিত গত ১৭ বছরে বিদেশে পাচার হওয়া সম্পদ পুনরুদ্ধার করা এবং প্রশাসন সংস্কারে সেগুলো ব্যবহার করা।’

 

আলোচনায় প্রাতিষ্ঠানিক ও আর্থিক সহায়তার মাধ্যমে জবাবদিহি বৃদ্ধিতে বাংলাদেশি প্রবাসীদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার ওপরও আলোকপাত করা হয়। উভয় বক্তা গণতন্ত্রে গণমাধ্যমের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার ওপর জোর দেন।

 

ড্যানিলোভিচ বলেন, ‘গণতান্ত্রিক আলোচনাকে শক্তিশালী করতে গণমাধ্যমের প্রভাবকে উপেক্ষা করা যায় না এবং নাগরিক সাংবাদিকতাকে উৎসাহিত করা উচিত।’

 

প্রশ্নোত্তর পর্বে রাষ্ট্রদূত মাইলাম এবং ড্যানিলোভিচ ছাত্র, রাজনীতিবিদ এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের প্রশ্নের উত্তর দেন। তারা বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক এবং দেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ সম্পর্কে বিশদ আলোচনা করেন। বাংলাদেশে বিভিন্ন বিদেশি মিশনের কূটনীতিক, রাজনীতিবিদ, শিক্ষাবিদ, ব্যবসায়ী নেতা, আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধি, সুশীল সমাজের সদস্য, সাংবাদিক এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অনুষ্ঠানে যোগ দেন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এজাতীয় আরো নিউজ দেখুন
error: Content is protected !!
error: Content is protected !!