শিরোনাম :
মিয়ানমারে পচারকালে আটক করেছে কোস্টগার্ড টেকনাফ উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর প্রতিবাদ টেকনাফ সদরে গরুর হাটবাজার শুভ উদ্বোধন করেন চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান জিহাদ টেকনাফ প্রেসক্লাবের তালা ভেঙ্গে জোরপূর্বক গঠিত আহবায়ক কমিটির আবুল কালাম আজাদ ও সাইফীর বিরুদ্ধে মামলা জাপান সফরেও আগামী বছর জুনের মধ্যে ভোটের অঙ্গীকার প্রধান উপদেষ্টার সেন্টমার্টিনকে ‘সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক’ মুক্ত করার চেষ্টা করছি: পরিবেশ উপদেষ্টা মামলা প্রত্যাহার তালিকা দিয়েছে জামায়াত ও বিএনপি অনির্দিষ্টকালের জন্য সারাদেশে জুয়েলারি প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা দিল্লি নয় পিন্ডি নয় সবার আগে বাংলাদেশ: তারেক রহমান টেকনাফে সন্ত্রাসীদের হামলায় মৃত্যুর মুখে এক শিক্ষক 
সোমবার, ১৬ জুন ২০২৫, ০৩:৫১ পূর্বাহ্ন
বিজ্ঞপ্তি :
আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম.... বিশ্বের যে কোন স্থান থেকে সকল প্রকার সংবাদ পেতে আমাদের ওয়েবসাইট www.teknaftv.com ভিজিট করুন। ধন্যবাদ!

বাংলাদেশ সীমান্ত ঘিরে আরাকান আর্মির ‘নীল নকশা’

নিউজ ডেস্ক / ১৫৩ বার দেখা হয়েছে
আপডেট সময় : বুধবার, ৫ মার্চ, ২০২৫

পার্বত্যাঞ্চল কক্সবাজার ঘিরে মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির ‘নীল নকশা’র আঁচ পাওয়া যাচ্ছে! সম্প্রতি নাফ নদী থেকে জেলেদের ধরে নিয়ে মুক্তিপণের বদলে দাবি করছে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী সম্পর্কে নানান তথ্য। সীমান্তে কোথায় কোথায় বিজিবি কোস্টগার্ডের ঘাঁটি বা অফিস, তারা কোন ধরনের অস্ত্র ব্যবহার করে— এ ধরনের স্পর্শকাতর বিষয় সম্পর্কে জানতে চায় আরাকান আর্মি! সম্প্রতি নাফ নদী থেকে অপহৃত কয়েকজন মুক্তি পেয়ে দেশে ফিরে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন।

 

তাদের দাবি, পার্বত্যাঞ্চলে আরাকান আর্মির ঘাঁটি তৈরি করা হয়েছে। আরাকান আর্মির সদস্যদের পরিবারও বাংলাদেশ থাকে।

 

 

 

গত ২৭ ফেব্রুয়ারি আরাকান আর্মির হাত থেকে মুক্তি পাওয়া টেকনাফের জেলে মাহমুদুল হাসান বলেন, সীমান্তে নিয়ে যাওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর আরাকান আর্মির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বাংলায় আমাদের সীমান্তে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অবস্থান সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতে আসেন। তারা আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সংখ্যাও জানতে চান। এরপর তারা জানতে চান বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকায় কোন কোন জায়গায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঘাঁটি বা অফিস আছে, তারা কোন ধরনের অস্ত্র ব্যবহার করে- এসব।

 

 

 

তথ্য দিতে অস্বীকার করায় তার ওপর অমানসিক নির্যাতন চলে বলেও জানান তিনি। দুদিন পর মাহমুদুল এবং তার অন্য সঙ্গীদের পাহাড়ি এলাকার একটি কারাগারে স্থানান্তর করে আরাকান আর্মি। যেখানে তারা পরবর্তী ১৫ দিন বন্দি ছিলেন।

 

 

 

অন্য কোন সুবিধা ছিলনা জানিয়ে এই জেলে আরো বলেন, তারা আমাদের কোনো কথাই শোনেনি। আমরা তাদের বোঝানোর চেষ্টা করেছি জোয়ার বাড়ায় আমাদের জাল ভাসতে ভাসতে চলে গেছে। আমাদের প্রথমে মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী একটি বিদ্রোহী গোষ্ঠী নিয়ন্ত্রিত ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়। রাখা হয় কড়া নজরদারিতে। মলমূত্র ত্যাগের জন্য অপহরণ করা শুধু একটি বালতি দেওয়া হয়। কিন্তু অন্য কোনো সুবিধা ছিল না।

 

 

 

আমাদের কেবল একমুঠো ভাত এবং সিদ্ধ কলাগাছ দেওয়া হতো। কখনো কখনো শুধু মসুর ডাল দেওয়া হতো, তবে তা পচা ছিল এবং তাতে পোকা থাকতো। এমনকি আমাদের দেওয়া পানি ছিল পোকামাকড় এবং সিগারেটের ছাইযুক্ত।— যোগ করেন আরাকান আর্মির হাত থেকে মুক্তি পাওয়া জেলে মাহমুদুল হাসান।

 

 

 

২১ বছর বয়সী মৎস্যজীবী আব্দুর রহমান, যিনি ১৭ দিন আরাকান আর্মির ক্যাম্পে বন্দি ছিলেন। তিনি বলেন, ‘আমরা বন্দি থাকার সময় কিছু বাংলাভাষী আরাকান আর্মি সদস্য বলেছিলেন, তাদের পরিবার কক্সবাজার এবং টেকনাফে বসবাস করে। কিছুদিন আগেও জেলেদের পরিবারের কাছ থেকে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ৩৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায় করেছে আরাকান আর্মির সদস্যরা। এটি অত্যন্ত গোপনে হয়েছে।’

 

 

 

২০ বছর ধরে মৎস্যজীবী হিসেবে কাজ করা মো. শফিউল্লাহ বলেন, আমরা জানি যে প্রতিদিন দুই বা তিনজন জেলেকে আরাকান আর্মি জোর করে আটক করছে। আমাদের নৌকা যদি সামান্য ভুল করেও তাদের এলাকায় প্রবেশ করে তাহলে তারা আমাদের বাংলাদেশে ঢুকে আটক করে।

 

 

 

শফিউল্লাহ দাবি করেন, আরাকান আর্মি সাধারণত জেলেদের মুক্তির জন্য এক লাখ বা দেড় লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায় করে। তাদের কাছে বাংলাদেশি সিম কার্ড আছে এবং তারা নির্যাতনের ছবি এবং ভিডিও পাঠিয়ে পরিবারের কাছ থেকে মুক্তিপণ আদায় করে। তারা বাংলাদেশি মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে মুক্তিপণ সংগ্রহ করে, যা মূলত বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গাদের একটি গ্রুপ পরিচালনা করে। এই গ্রুপটির সঙ্গে আরাকানদের পরিবারগুলোর যোগাযোগ রয়েছে।

 

 

 

যা বলছে বিজিবি

 

 

 

সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্যরা এসব বিষয়ে সরাসরি কোনো কথা না বললেও, সীমান্তে কিছু চ্যালেঞ্জ আছে এবং সেগুলো কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন।

 

 

 

তবে মিয়ানমার সীমান্ত নিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর সাম্প্রতিক মন্তব্যও কিছুটা এমন ইঙ্গিত দেয়। সম্প্রতি একটি অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, সীমান্ত সুরক্ষা নিশ্চিত করতে মিয়ানমারের আরাকান আর্মির (এএ) সঙ্গে বাংলাদেশ যোগাযোগ রাখছে। টেকনাফ স্থলবন্দরে মিয়ানমারের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য রয়েছে। কিন্তু আরাকান আর্মি রাখাইন রাজ্য দখলে নেওয়ার পর থেকে সীমান্ত বাণিজ্যের জাহাজ আসা যাওয়ায় তারা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে।

 

 

 

বিজিবি টেকনাফ ব্যাটালিয়নের কমান্ডিং অফিসার লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিকুর রহমান বলেন, আমাদের বাংলাদেশি নৌকা মিয়ানমারে চলে গেলে আরাকান আর্মি জেলেদের ধরে নিয়ে যায়। তবে তারা যে আমাদের সীমান্ত এলাকায় প্রবেশ করছে এটি সত্য নয়। আরাকান আর্মি সক্রিয় হতে এবং স্বীকৃতি পেতে চায়, এজন্য তারা এমন ঘটনা ঘটাচ্ছে। তবে আরাকানদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তারা সাড়া দেয়। যার কারণে আমরা জেলেদের ফিরিয়ে আনতে পারছি।

 

 

 

মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে মুক্তিপণ নেওয়ার বিষয়ে লে. কর্নেল আশিকুর জানান, তারা এখন পর্যন্ত এমন অভিযোগ পাননি। আরাকানরা বাংলাদেশি জেলেদের কাছ থেকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ আদায় করছে, যা তারা তাদের এলাকায় প্রবেশের জন্য শাস্তি হিসেবে নেয়।

বিজিবির নিরাপত্তা পোস্ট সম্পর্কে জেলেদের জিজ্ঞাসাবাদ সম্পর্কে এই কর্মকর্তা বলেন, সীমান্তে কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। বিভিন্ন কৌশল ব্যবহার করে সেগুলো কাটিয়ে উঠতে চেষ্টা করছি আমরা। বিজিবি সদস্যরা সীমান্তে সর্বদা সক্রিয় থাকেন। অন্য বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে সীমান্ত রক্ষার কাজ করে যাচ্ছে নিরলসভাবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এজাতীয় আরো নিউজ দেখুন
error: Content is protected !!
error: Content is protected !!