টেকনাফে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের মধ্যে এখন সবচেয়ে ভয়ংকর হয়ে উঠেছে টেকনাফের নয়াপাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ‘ডাকাত শফি’। অত্যাধুনিক দেশি-বিদেশি ২০টিরও বেশি আগ্নেয়াস্ত্র সজ্জিত এই বাহিনীতে আরো অন্তত ৩০ জন সদস্য রয়েছে।
‘শফি ডাকাত` আবারো সক্রিয় হয়ে পাহাড়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে ক্যাম্পে প্রকাশ্যে ঘুরে ফাঁকা গুলি করে বেড়াচ্ছেন বলে নিশ্চিত করেন এক যুবক।
গতকাল মধ্যে রাতে শীর্ষ রোহিঙ্গা ডাকাত শফি ও তার সহযোগীরা পাহাড়ে ও ক্যাম্প পাদদেশে ২০ জনের সদস্য ২০ /৪০ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়ে পাহাড়ে উঠে অবস্থান করছেন। রাত সাড়ে ১ টার দিকে নয়াপাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পাহাড়ে উঠে বড় বড় আওয়াজে চিৎকার করে ‘শফি ও তার সহযোগীরা’এসব শুনতে পেয়েছেন পাহাড়ের পার্শ্ববর্তী থাকা রোহিঙ্গাদের বাড়িঘরের লোকজন।
মো.শফি (২৮) টেকনাফের নয়াপাড়া রেজিস্ট্রার্ড ক্যাম্পের সি ব্লকের দিল মোহাম্মদের ছেলে।
ক্যাম্পের একাধিক সূত্র বলছে, শালবাগান, নয়াপাড়া, লেদা, নয়াপাড়া ক্যাম্পে এ স্বশস্ত্র রোহিঙ্গা দুর্বৃত্তদের তৎপরতা আগের চেয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে। ক্যাম্পে নিয়োজিত ব্লক মাঝি ও কতিপয় ভলান্টিয়াররা এসব ডাকাতদের সোর্স হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে। যার ফলে প্রশাসনের অভিযানের খবর দ্রুত পেয়ে যায় ডাকাত দল। এছাড়াও প্রকাশ্যে অবৈধ অস্ত্র নিয়ে চলাফেরা, অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায় বাণিজ্যে সাধারণ রোহিঙ্গারা অতিষ্ঠ হওয়ার পাশাপাশি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পের একাধিক মাঝি নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, শফি ছিল সালমান শাহ গ্রুপের সেকেন্ড ইন কমান্ড। এখন আলাদা হয়ে করেছে নিজস্ব গ্রুপ করে। ২০২২ সালের ৫ মে এপিবিএনের হাতে অস্ত্রসহ আটক হয়ে কারাভোগও করেছে। এখন জামিনে বের হয়ে পাহাড়ে তার নেতৃত্বে চলছে ত্রাসের রাজত্ব।
রোহিঙ্গারা জানায়, ক্যাম্প সংলগ্ন পাহাড়ে শচার-পাঁচটি শফি ডাকাত ও সদস্যরা তাদের গোপন আস্তানা তৈরির চেষ্টা করছে। এরই মধ্যে কয়েকটি আস্তানা তৈরি হয়ে গেছে। শুধু ক্যাম্পের সাধারণ রোহিঙ্গাদের কাছেই নয়, কক্সবাজারে বসবাসকারী বাঙালি জনগোষ্ঠীর কাছেও এসব ডাকাত গ্রুপ আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের দ্রুত আইনের আওতায় না আনলে ক্যাম্পের পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাবে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আশে-পাশের পাহাড়ে অবস্থানরত শফি গ্রুপের সদস্যদের স্বশস্ত্র মহড়া চলমান। এ গ্রুপের লিডার শীর্ষ ডাকাত শফি ওরফে “ডাকাত শফি ” তার নির্দেশ মেনে চলে অন্য ডাকাত সদস্যরা। শফি ডাকাতের তৎপরতায় এসব অপহরণ ডাকাতি সৃষ্টি হচ্ছে।
সূত্রটি আরও জানায়, স্বশস্ত্র গ্রুপ পাহাড় থেকে নেমে ক্যাম্পে এসে মাদক চোরাচালান নিয়ন্ত্রণ, অবৈধ অস্ত্র বেচা-বিক্রি, ভাড়াটে খুনি, অপহরণ ও মুক্তিপণ বাণিজ্যের পাশাপাশি অবৈধ অস্ত্রের মহড়া দিয়ে যাচ্ছে। বলতে গেলে রোহিঙ্গা ক্যাম্প কেন্দ্রিক অপরাধ জগত নিয়ন্ত্রণ করছে এই ডাকাত চক্র ও তাদের সহযোগীরা। এসব ডাকাতদের হাতে হামলার শিকার হয়েছে আইশৃঙ্খলাবাহিনীর একাধিক সদস্যও।
স্থানীয় সচেতন মহলের দাবি করে বলেন, পাহাড়ের সেনাঘাঁটি করে এই শফিক গ্রুপের প্রধান শফি ও সহযোগীদের দ্রুত আওতায় আনার দাবি আনা জরুরি।