বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো রিওভাইরাস নামে একটি ভাইরাসের অস্তিত্ব শনাক্ত হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান বা আইইডিসিআর পরীক্ষায় দেশের পাঁচজন ব্যক্তির শরীরের এই ভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে।
আক্রান্ত পাঁচজনের কারও ক্ষেত্রে তেমন কোনো জটিলতা দেখা যায়নি। চিকিৎসা শেষে তারা সবাই বাড়ি ফিরে গেছেন বলে জানিয়েছে আইইডিসিআর।
আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরীন বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, “খেজুরের কাঁচা রস খেয়ে প্রতি বছর অনেকে নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে থাকে। সেরকম লক্ষণ দেখে কয়েকজনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছিল। তাদের নমুনায় রিওভাইরাসের অস্তিত্ব মিলেছে”।
নিপাহ ভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে আসা ৪৮ জনের নমুনা সংগ্রহ করে পাঁচজনের শরীরে রিওভাইরাস শনাক্ত করা হয়।
আক্রান্তদের থেকে যখন নমুনা সংগ্রহ করা হয়, তখন তাদের নিপাহ ভাইরাস নেগেটিভ ছিল। অন্য ভাইরাস আছে কি না দেখতে গেলে রিওভাইরাস পজেটিভ পাওয়া যায় ওই পাঁচজনের নমুনায়।
আইইডিসিআর বলছে, মূলত নতুন রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণুর ওপর নিয়মিত গবেষণার অংশ হিসেবে এই নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল।
ভাইরোলজিস্টরা বলছেন, এই ভাইরাসে আক্রান্ত হলে যে লক্ষণগুলো হয় তা অন্যান্য ভাইরাসের মতোই অনেকটা।
ভাইরোলজিস্ট ও বিএসএমএমইউ সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের পরিচালক ডা. সাইফ উল্লাহ মুন্সী বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, এই ভাইরাসগুলো অনেক দিন থেকে আমাদের মধ্যে আছে। ইনফেকশন করলেও সে তেমন ক্ষতিকারক না। এমন পৃথিবীতে অনেক ভাইরাস আছে যারা প্রতিনিয়ত ইনফেক্ট করে কিন্তু কোন ধরনের বড় ক্ষতির কারণ না।
চিকিৎসকদের মতে, এই ভাইরাসে আক্রান্ত তেমন গুরুত্বর কোন লক্ষণ দেখা যায় না। যে কারণে এর জন্য আলাদা কোন চিকিৎসা পদ্ধতি নেই। সেই সাথে আতঙ্কিত না হওয়ারও পরামর্শ তাদের।
রিওভাইরাস কি?
রিওভাইরাস মূলত একটি রাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড (আরএনএ) ভাইরাস। রিওভাইরাস রিও-ভাইরিডি গ্রুপের ভাইরাস। এই ভাইরাস গোত্রের মধ্যে পরিচিত একটি ভাইরাস হলো রোটা ভাইরাস।
চিকিৎসকরা বলছেন, অন্য মতো এই ভাইরাসের আলাদা কোন লক্ষণ নেই। অন্য ভাইরাসের মতোই স্বাভাবিকভাবে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হলে জ্বর, সর্দি, মাথায় ব্যথা, হাঁচি কাশির মতো লক্ষণ দেখা দিতে পারে।
কখনো কখনো আক্রান্ত হলে ডায়েরিয়ার মতো লক্ষণও দেখা দিতে পারে বলে জানাচ্ছেন তারা।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক ডা. ফরহাদুল ইসলাম বলেন, “এই ভাইরাস আগেও হয়তো ছিল। কিন্তু কখনো এটা শনাক্তের জন্য কোন ধরনের পরীক্ষা করা হয় নি।”
ভাইরোলজিস্টরা মনে করেন, এই ভাইরাসে যদি কেউ আক্রান্ত হয়ও তাতে এমন কোন লক্ষণ দেখা দিবে না, যা আতঙ্ক সৃষ্টি করতে পারে।
ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক সাইফ উল্লাহ মুন্সী বিবিসি বাংলাকে বলেন, “এই ভাইরাসটা অনেক আগে থেকেই আমাদের মাঝে আছে। নতুন কিছু না। ধরেন যদি ১০০ জনকে পরীক্ষা করা হয় তাহলে ৫০ জনের মধ্যেই এটা পাওয়া যাবে”।
সেটি কিভাবে পাওয়া যাবে তার একটা ব্যাখ্যাও দিয়েছেন মি. মুন্সী।
“ধরুন কোন এক সময় একজন আক্রান্ত হয়েছিল, এখন ঠিক এই ভাইরাসের এন্টিবডি পরীক্ষা করবেন, দেখা যাবে সেটা পজিটিভ”।
তার মতে, কেউ যদি এই ভাইরাস আক্রান্ত হয়ে থাকেন তার ঠাণ্ডা জ্বর থেকে শুরু করে পেট খারাপ, প্রদাহসহ বিভিন্ন লক্ষণ দেখা দিতে পারে।