আর কত বছর আমাদের জন্মভূমি ছেড়ে ক্যাম্পে বসবাস করতে হবে। বাংলাদেশে আর থাকতে চাই না, দেশে চলে যেতে চাই। মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর দিনদিন নির্যাতন বেড়েই চলছে। আমাদের ওপর এমন অমানবিক নির্যাতন বন্ধের আহ্বান জানাচ্ছি সারা বিশ্বের কাছে।
রোহিঙ্গা আয়াছ মাঝি এভাবে নিজ জন্মভূমি মিয়ানমারে চলে যাওয়ার আকুতি জানান। তিনি বলেন, আমরা দেশে চলে যেতে চাই। কিন্তু সবসময় দেশে সংঘর্ষ লেগেই থাকে, আমাদের উপায় কি। এখন আরো নতুন নতুন রোহিঙ্গা বাংলাদেশে চলে আসছে।
রোহিঙ্গারা জানান, মিয়ানমারে রোহিঙ্গারা দৌড়ানির ওপর রয়েছেন। কখন কোথায় রাত কাটাচ্ছে তারা নিজেরাও জানেন না। নিজের দেশ হয়েও রোহিঙ্গাদের কোন নিরাপত্তা নেই বলে জানান এসব নির্যাতিত রোহিঙ্গারা।
তারা বলছেন, আমাদের জীবন শুধু নির্যাতনের ওপর শেষ হয়ে যাচ্ছে। কত আপনজনকে হারিয়েছি, আল্লাহ ছাড়া কেউ জানেন না। নির্মমভাবে অনেক মানুষকে হত্যা করা হচ্ছে। আমাদের নিরাপত্তা কোথায়? আমাদের স্বাধীনতা কোথায়? কে কোথায় মারা যাচ্ছে কারো মাথা ব্যথা নেই!
রোহিঙ্গা যুবক হোসেন জোহার বলেন, আমাদের বাড়ি-ঘর থেকে এদিক ওদিক যেতে দিচ্ছে না। আমরা ৮ গ্রামের মানুষকে বাড়ি থেকে বের হতে দেয়নি। গ্রামে আরকান আর্মির ঢুকে পড়েছে বলে অযুহাত তুলে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে। ঘোনা পাড়া একটি গ্রামে দুই রাত আশ্রয় নিয়েছি। পরে ঘোনা পাড়া থেকে হাইর পাড়া ঘাটে চলে এসেছি। আমরা এভাবে এক মাস মতো থেকেছিলাম। খাওয়া-দাওয়া করতে বেশি কষ্ট পেয়েছি। বাড়ি ঘর থেকে কিছু আনতে পারিনি। শুধু গায়ের কাপড় নিয়ে চলে আসছি। এ অবস্থা এক মাস মতো দেখছিলাম। যখন বেশি গোলাগুলি হয় তখনই ভাইয়ের স্ত্রী-সন্তান গুলিতেই মারা যায়। তাই আমরা ভয়ে বাংলাদেশে চলে আসছি।
রোহিঙ্গা নির আহমদ বলেন, আরকান আর্মি আমাদেরকে ধরে জামবনিয়া ক্যাম্পে নিয়ে আসে। সেখান থেকে পালিয়ে এই দেশে চলে এসেছি। আমাদের এলাকায় অনেক মানুষ মারা গেছে। আমার বাড়ির পাশেও ১০ জনের মতো মারা গেছে। অনেকেই আহত হয়েছে। অনেক মানুষ চিকিৎসা করার জন্য বাংলাদেশে চলে এসেছে। কেউ কাউকে খুঁজে পাইনি। সবাই এদিক ওদিক যে যেখানে পেরেছে চলে গেছে। দুটি মাস দৌড়ানির মধ্যে ছিলাম। আমরা এক পরিবারের ১০ জন চলে আসছি। আমরা এখনো খাওয়া দাওয়ার কিছু পাচ্ছি না। আমরা বাংলাদেশে আসার সময় দালালদের মিয়ানমারের ৫ লাখ টাকা করে দিতে হয়েছে।
রোহিঙ্গা নারী জুহুরা খাতুন বলেন, আরকান আর্মি আমাদের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে। আমাদেরকে বেশি নির্যাতন জুলুম করছে। বেশি মানুষ মারা গেছে। সেজন্য ভয়ে নৌকা নিয়ে চলে আসছি। আমরা ৬ জন চলে আসছি। জনপ্রতি মিয়ানমারের ৫ লাখ টাকা করে দিতে হয়েছে। মিয়ানমারের সীমান্তে রাস্তায় রাস্তায় ছোট শিশু-নারীসহ অনকে মানুষ মরতে দেখেছি। কারা হামলা চালিয়েছে বুঝতে পারি না। চতুর্দিকে হামলা আর হামলা। এক সপ্তাহ হয়েছে আমরা এসেছি। আমরা কোনোরকম ৬ জন বেঁচে আছি।