শিরোনাম :
মিয়ানমারে পচারকালে আটক করেছে কোস্টগার্ড টেকনাফ উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর প্রতিবাদ টেকনাফ সদরে গরুর হাটবাজার শুভ উদ্বোধন করেন চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান জিহাদ টেকনাফ প্রেসক্লাবের তালা ভেঙ্গে জোরপূর্বক গঠিত আহবায়ক কমিটির আবুল কালাম আজাদ ও সাইফীর বিরুদ্ধে মামলা জাপান সফরেও আগামী বছর জুনের মধ্যে ভোটের অঙ্গীকার প্রধান উপদেষ্টার সেন্টমার্টিনকে ‘সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক’ মুক্ত করার চেষ্টা করছি: পরিবেশ উপদেষ্টা মামলা প্রত্যাহার তালিকা দিয়েছে জামায়াত ও বিএনপি অনির্দিষ্টকালের জন্য সারাদেশে জুয়েলারি প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা দিল্লি নয় পিন্ডি নয় সবার আগে বাংলাদেশ: তারেক রহমান টেকনাফে সন্ত্রাসীদের হামলায় মৃত্যুর মুখে এক শিক্ষক 
সোমবার, ১৬ জুন ২০২৫, ০৪:৫৬ পূর্বাহ্ন
বিজ্ঞপ্তি :
আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম.... বিশ্বের যে কোন স্থান থেকে সকল প্রকার সংবাদ পেতে আমাদের ওয়েবসাইট www.teknaftv.com ভিজিট করুন। ধন্যবাদ!

হাসপাতালে নেওয়া যায়নি বলে সেন্ট মার্টিনের দুই শিশুর মৃত্যু

ডেস্ক নিউজ / ৫৭ বার দেখা হয়েছে
আপডেট সময় : শুক্রবার, ২৩ মে, ২০২৫

সেন্ট মার্টিন দ্বীপের ২০ শয্যার স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নেই চিকিৎসক, জনবল ও সরঞ্জাম। নৌ অ্যাম্বুলেন্স না থাকায় জরুরি রোগীদের টেকনাফেও আনা যাচ্ছে না। ফলে গুরুতর রোগীরা চিকিৎসা পাচ্ছেন না। দুই দিনের ব্যবধানে চিকিৎসা না পেয়ে দুই শিশুর মৃত্যু হলো।

শ্বাসকষ্ট ও জ্বর নিয়ে কক্সবাজারের টেকনাফের সেন্ট মার্টিন দ্বীপের ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আনা হয় আট দিন বয়সী শিশু মোহামদ জিশানকে। দ্বীপের একমাত্র ২০ শয্যার হাসপাতালটিতে নেই কোনো চিকিৎসক। তবে শিশুটির লক্ষণ দেখে তাকে দ্রুত টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিতে বলেছিলেন সেখানকার দায়িত্বে থাকা স্বাস্থ্য সহকারী শহিদুল ইসলাম। কিন্তু সাগর উত্তাল থাকায় তাকে টেকনাফের হাসপাতালে আনা যায়নি। গুরুতর অসুস্থ শিশুটির মৃত্যু হয় একরকম চিকিৎসা না পেয়ে।

আজ বৃহস্পতিবার সকাল নয়টার দিকে হাসপাতালে মারা যায় দ্বীপের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ পাড়ার বাসিন্দা মোহাম্মদ তৈয়ুবের ছেলে জিশান। এ নিয়ে দুই দিনের ব্যবধানে হাসপাতালে নিতে না পারায় দ্বীপে অসুস্থ হয়ে দুই শিশুর মৃত্যু হলো। গত মঙ্গলবার দুপুরের দিকে দ্বীপের গুচ্ছগ্রাম ও ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মো. আমিনের পাঁচ বছর বয়সী ছেলে মোহাম্মদ বেলালের মৃত্যু হয়। সাগর উত্তাল থাকায় মঙ্গলবার থেকে আজ দুপুর দুইটা পর্যন্ত টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন নৌপথে সার্ভিস ট্রলার চলাচল বন্ধ রয়েছে। এর ফলে অসুস্থ রোগীদের টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া যাচ্ছে না। দ্বীপের ২০ শয্যা হাসপাতাল এত দিন চলছিল একজন অফিস সহায়ক দিয়ে। কয়েক দিন আগে একজন স্বাস্থ্য সহকারী নিয়োগ দেওয়া হলেও কোনো চিকিৎসক নেই।

১৮ মে সেন্ট মার্টিন ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র নিয়ে প্রথম আলোর অনলাইনে ‘অফিস সহায়ক দিয়েই চলছে হাসপাতাল’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল। প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর দ্বীপে বিশেষ একজন স্বাস্থ্য সহকারী পাঠানো হয়। তবে দ্বীপবাসীর দাবি অনুযায়ী এখনো যোগ দেননি চিকিৎসক, নার্সসহ স্বাস্থ্যকর্মীরা। নেই প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য সরঞ্জাম ও ওষুধ। দ্বীপের জন্য কোনো নৌ অ্যাম্বুলেন্সেরও ব্যবস্থা করা হয়নি। ফলে স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছেন না দ্বীপের ১১ হাজার বাসিন্দা।

সেন্ট মার্টিন ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সদ্য আসা স্বাস্থ্য সহকারী শহিদুল ইসলাম মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, আজ আট দিন বয়সী শিশু জিশানের মৃত্যু হয় হাসপাতালে। সম্ভবত তার নিউমোনিয়া হয়েছিল। তাকে টেকনাফ নেওয়ার জন্য বলা হলেও সাগর উত্তাল থাকায় নেওয়া যায়নি। এর আগে বেলাল নামের আরও এক শিশুর মৃত্যু ঘটে। তীব্র জ্বর আর জন্ডিসের লক্ষণ ছিল শিশুটির। হাসপাতালের আনার পরপরই মারা যায় সে।

আজ সকালে মারা যাওয়া শিশু জিশানের দাদি হাসিনা বেগম বলেন, জ্বর ও শ্বাসকষ্টে ভুগছিল জিশান। এর মধ্যে সেন্ট মার্টিন হাসপাতালে নিয়ে গেলেও উন্নত চিকিৎসার জন্য টেকনাফ নিয়ে যেতে বলেন সেখানকার স্বাস্থ্য সহকারী। কিন্তু সার্ভিস ট্রলার চলাচল বন্ধ থাকায় চিকিৎসার জন্য টেকনাফে নেওয়া সম্ভব হয়নি।

পাঁচ বছর বয়সী বেলালের জন্ডিস হয়েছিল বলে ধারণা করছেন বাবা মোহাম্মদ আমিন। তিনি বলেন, ‘সাগর উত্তাল থাকার কারণে সার্ভিস ট্রলার চলাচল বন্ধ ছিল। ফলে ছেলেটিকে আমরা চিকিৎসাই দিতে পারিনি। আমাদের চোখের সামনেই মারা গেল সে। একটা নৌ অ্যাম্বুলেন্স থাকলে হয়তো ছেলেটা বাঁচত।’

মঙ্গল থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত তিন দিন আবহাওয়া খারাপ থাকায় টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন নৌপথে সার্ভিস ট্রলার চলাচল বন্ধ রয়েছে। সেন্ট মার্টিন দ্বীপ থেকে কেউ টেকনাফে আসতে পারেননি। টেকনাফ থেকেও কেউ সেন্ট মার্টিন দ্বীপে যেতে পারেননি। আবহাওয়া ভালো হলেই টেকনাফ থেকে যাত্রী ও মালামাল নিয়ে সেন্ট মার্টিনে ট্রলার আসবে বলে জানান সার্ভিস ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি আবদুর রশিদ।

সেন্ট মার্টিন দ্বীপের ভারপ্রাপ্ত ইউপির চেয়ারম্যান ফয়েজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, দ্বীপের বাসিন্দা ও পযর্টকদের কথা বিবেচনা করে ২০০২ সালে সেন্ট মার্টিন দ্বীপে পশ্চিম পাড়ায় প্রায় ছয় কোটি টাকা ব্যয়ে একটি হাসপাতাল ভবন নির্মাণ করা হয়। হাসপাতালটি ২০ শয্যার হলেও এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের লোকবল নিয়োগ করা হয়নি। প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে দ্বীপের যোগাযোগব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তা চিকিৎসক প্রণয় রুদ্র প্রথম আলোকে বলেন, সেন্ট মার্টিন হাসপাতালে শুধু একজন অফিস সহায়ক ছিলেন। প্রথম আলোর এক প্রতিবেদন প্রকাশের পর বিশেষ ব্যবস্থায় একজন স্বাস্থ্য সহকারীকে পাঠানো হয়েছে। তিনি এখন দ্বীপের মানুষকে জরুরি চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন। জটিল কোনো রোগী হলে টেকনাফ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকদের সঙ্গে টেলিযোগাযোগের মাধ্যমে সেবা প্রদান করে যাচ্ছেন তিনি। তবে এর মধ্যে মঙ্গলবার ও আজ বৃহস্পতিবার সেন্ট মার্টিন দ্বীপে দুই শিশু মারা গেছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এজাতীয় আরো নিউজ দেখুন
error: Content is protected !!
error: Content is protected !!