শিরোনাম :
৩০ ঘণ্টা পর মিলল নিখোঁজ বিজিবি বেলালের মরদেহ, বাড়িতে শোকের মাত বিএনপি নেতার হাত কর্তনকারী ৩৯ মামলার আসামি ইউপি সদস্য এনামের ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন  টেকনাফে সমুদ্রে নৌকাডুবিতে এক শিশুসহ চার রোহিঙ্গার মৃত্যু, বিজিবি সদস্য নিখোঁজ! আ’লীগের ৭৭০ জনকে অভিযুক্ত করে কক্সবাজারে মামলা টেকনাফে শ্বশুর বাড়ি থেকে যুবককে তুলে নিয়ে নির্যাতন, হাসপাতালে মৃত্যু টেকনাফে ট্রলার থেকে ৪০ হাজার ইয়াবাসহ ৭ মাদক পাচারকারীকে আটক শাহপরীর দ্বীপে জামায়াতের ইফতার মাহফিলে জেলা আমীর আনোয়ারী বড় ছেলে জিহাদ এর জন্মদিনে বাবা শামসুর অনুভূতি! মিথ্যা পরিচয়ে ফ্ল্যাট ভাড়া নেন আরসা নেতা আতাউল্লাহ গুম কমিশনে গিয়ে তথ্য দিলেন সাবেক সেনাপ্রধান ইকবাল করিম ভূঁইয়া
সোমবার, ২৪ মার্চ ২০২৫, ০৪:০৪ অপরাহ্ন
বিজ্ঞপ্তি :
আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম.... বিশ্বের যে কোন স্থান থেকে সকল প্রকার সংবাদ পেতে আমাদের ওয়েবসাইট www.teknaftv.com ভিজিট করুন। ধন্যবাদ!

সেন্টমার্টিনে তিন রিসোর্টে আগুন, ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি

মুহাম্মদ কিফায়ত উল্লাহ / ৭৪ বার দেখা হয়েছে
আপডেট সময় : বুধবার, ১৫ জানুয়ারী, ২০২৫

প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনে আগুনে তিনটি ইকো রিসোর্টের ২৬টি কক্ষ পুড়ে ছাই হওয়ার পর অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। দ্বীপটিতে বিভিন্ন মানের আড়াই শত আবাসিক প্রতিষ্ঠান থাকলেও যেখানে অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা কি— তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। দ্বীপের জনপ্রতিনিধির দাবি, মাত্র কয়েকটি ছাড়াই কোন প্রতিষ্ঠানে অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা নেই। আর আগুন নিয়ন্ত্রণে নেই কোন সরকারি ব্যবস্থাও।

 

মঙ্গলবার দিবাগত রাতে আগুনে দ্বীপের তিনটি ইকো রিসোটের ২৬টি কক্ষ পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এতে প্রাথমিকভাবে ৬ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা। ইতিমধ্যে জেলা প্রশাসকের পক্ষে ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

 

মঙ্গলবার দিনগত মধ্যরাত ২টা ১০মিনিটের দিকে প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন দ্বীপের গলাচিপা এলাকার বীচ ভ্যালী এবং কিংশুক ও সাইরী ইকো রিসোর্টে এই আগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে বলে নিশ্চিত করেছেন সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান।

 

প্রত্যক্ষদর্শী ও ইকো রিসোর্টে মালিকদের বরাত দিয়ে ইউপি চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান জানান, মধ্যরাতে সেন্টমার্টিনে পশ্চিম সৈকতের গলাচিপায় অবস্থিত সাইরী ইকো রিসোর্টের অভ্যর্থনা কক্ষ থেকে মাল্টিপ্লাগে শর্টসার্কিট হয়ে আগুনের সূত্রপাত ঘটেছে। এতে করে পাশে থাকা বীচ ভ্যালীর ১৮টি কক্ষ, কিংশুক ইকো রিসোর্টে ৭টি ও সাইরী ইকো রিসোর্টের অভ্যর্থনা কক্ষ ১টিসহ সর্বমোট ২৬টি কক্ষ পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।

 

তিনি বলেন, সাইরী ইকো রিসোর্টের অভ্যর্থনা কক্ষে মাল্টিপ্লাগে শর্টসার্কিট হয়ে আগুণের উৎপত্তি হয়। অভ্যর্থনা কক্ষে ঠিক পেছনে বীচ ভ্যালী ইকো রিসোর্ট। বাতাস থাকার কারণে মিনিটের মধ্যে বীচ ভ্যালীর ছাউনিতে আগুন লেগে যায়। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার আগে শুকনো কাঠ আর বাঁশ দিয়ে তৈরি বীচ ভ্যালী ইকো রিসোর্টে আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে কয়েক মিনিটের মধ্যে পুরো রিসোর্টে ছড়িয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে বীচ ভ্যালীসহ পাশের কিংশুক ইকো রিসোর্ট পুড়ে ছাই হয়ে যায়। সেন্টমার্টিন দ্বীপের স্থানীয় বাসিন্দা এবং আগত পর্যটক ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা প্রচেষ্টায় ভোর ৪ টার দিকে আগুণ নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়েছে।

 

বীচ ভ্যালীর ইকো রিসোর্টে পর্যটক ঢাকা থেকে বেড়াতে আসা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক দম্পতি বলেন, আগুনের সূত্রপাতের সময় অধিকাংশ পর্যটকেরা রিসোর্টের বাইরে থাকায় হতাহতের কোন ঘটনা ঘটেনি। তবে অধিকাংশ পর্যটকদের মালামাল পুড়ে ছাই হয়ে গেছে এবং নির্ঘুম রাত কাটাটা হয়েছে। কটেজ গুলোতে আগুন নিয়ন্ত্রণের বিকল্প কোন ধরনের ব্যবস্থা না থাকায় সবগুলো কক্ষপুড়ে ছাই হয়ে যায়।

 

দ্বীপের বাসিন্দা ও সাভিস ট্রলার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, প্রথমে সাইরী ইকো রিসোর্টে থেকে আগুন লাগে। পরে সেখান থেকে আরও দুটি রিসোর্টে আগুন লাগে। ঘটনার খবর পেয়ে স্থানীয় লোকজনসহ কোস্টগার্ড, নৌবাহিনী ও ট্যুরিস্ট পুলিশ এবং বিজিবি সদস্যরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন।

 

সেন্টমার্টিন দায়িত্বে থাকা টেকনাফ ২ বিজিবির উপ-অধিনায়ক মেজর ইশতিয়াক আহমেদ বলেন, আগুন লাগার খবর শুনে বিজিবি সদস্যরা স্থানীয়দের সহায়তায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। এতে আগত পর্যটকদের নিরাপত্তা প্রদানও জরুরি ছিল। পর্যটকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা গেছে। তবে আগুন নিভাতে গিয়ে স্থানীয় ৬ জন আহত হন। তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান করা হয়েছে।

 

কিংশুক ইকো রিসোর্টে স্বত্বাধিকারী সরওয়ার আলম বলেন, তিনটি রিসোর্টে প্রাথমিকভাবে ৬ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

 

সেন্টমার্টিন পুলিশ ফাঁড়ির কর্মকর্তা অজিত কুমার দাস বলেন, সেন্টমার্টিনে শায়রী রিসোর্ট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। এতে পাশের আরও দুটি রিসোর্ট আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এতে গলাচিপার বিচ ভ্যালি এবং কিংশুক রিসোর্টের অধিকাংশ পুড়ে গেছে। আমরা ঘটনাস্থল ঘুরে দেখেছি। এসব রিসোর্টগুলো খুব সুন্দর এবং উন্নত মানের ছিল। রিসোর্ট মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি প্রাথমিকভাবে প্রায় ৬ কোটি টাকায় ক্ষতি হয়েছে।

 

পুড়ে যাওয়া কিংশুক রিসোর্টের সহকারী পরিচালক সাইফুদ্দিন বাবর বলেন, হঠাৎ করে রাতে আগুন দেখতে পাই। সঙ্গে সঙ্গে আমরা হোটেলে থাকা পর্যটকদের নিরাপদে সরিয়ে নেই। ততক্ষণে আমাদের রিসোর্টের ১৫টি কক্ষ পুড়ে ছাই হয়ে যায়। কাঠ-বাঁশ এবং ছাউনি দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল আমাদের রিসোর্টটি। তাই দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়ে। এতে দেড় কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে। তাছাড়া আমাদের ব্যবসা লোকসানে পড়েছে।

 

সেন্টমার্টিন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, দ্বীপটিতে বিভিন্ন মানের আড়াই শত আবাসিক প্রতিষ্ঠান থাকলেও যেখানে অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা কি তা নিয়ে এখন প্রশ্ন উঠেছে। মাত্র কয়েকটি ছাড়াই কোন প্রতিষ্ঠানে অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা নেই। আর আগুন নিয়ন্ত্রণে নেই কোন সরকারি ব্যবস্থাও। ফলে এটিকে এখন গুরুত্ব দেয়া জরুরি।

 

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, আমাদের একটা টিম সেখানে পৌঁছেছে। আগুনের ঘটনাটি তদন্ত করে দেখা হবে। আর ক্ষতিগ্রস্তদের কীভাবে সহায়তায় করা যায়, সে বিষয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা চলছে।

 

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহ্উদ্দিন বলেন, সেন্টমার্টিন দ্বীপে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় দুটি রিসোর্ট সম্পূর্ণ ভস্মিভূত এবং একটি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পর্যটন মৌসুমের পাশাপাশি পর্যটকদের অবস্থান এবং গুরুত্ব বিবেচনায় ঘটনার তদন্তে টেকনাফের ইউএনও’কে প্রধান করে ৫ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী ২ দিনের মধ্যে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত, ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ ও সুপারিশমালা প্রণয়নে তদন্ত রিপোর্ট দিতে কমিটিকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

 

তদন্ত রিপোর্ট পাওয়ার পর অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা নিয়ে ফায়ার সার্ভিসের সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণের কথা জানান জেলা প্রশাসক।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এজাতীয় আরো নিউজ দেখুন
error: Content is protected !!
error: Content is protected !!