সমুদ্রে প্লাস্টিক দূষণ প্রতিরোধে কক্সবাজারের টেকনাফ ও সেন্টমার্টিন দ্বীপে “প্লাস্টিকের বিনিময়ে বাজার” কর্মসূচী শুরু হয়েছে।
আজ শনিবার প্রথমদিনে টেকনাফ ও সেন্টমাটিনের ৭০০জন দুস্থ পরিবার প্লাস্টিকের বিনিময়ে বাজার করতে পেরেছেন। বেলা সাড়ে ১১টায় এই কমসূর্চীর উদ্ধোধন করেন টেকনাফ উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) আরিফ উল্লাহ নিজামী।
বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে টেকনাফ পৌরসভার চৌধুরীপাড়া বিজিবির মাঠে বিশাল একটি সুপারশপ বসেছে নানা রকমের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের পসরা নিয়ে বসেছে এ বাজার।
অপরদিকে,সেন্টমার্টিন দ্বীপের জেটিঘাট সংলগ্ন সমুদ্রসৈকতে বালুচরে বসেছে প্লাস্টিকের বিনিময়ে এ সুপারশপ থেকে স্থানীয় বাসিন্দারা তাদের পছন্দের পণ্যে সামগ্রী কিনে নিচ্ছেন।
এ দুটি বাজার বা ইভেন্টে প্রায় ৫ মেট্রিক টনের বেশি প্লাস্টিক সংগ্রহ করা হয়েছে।সেই প্লাস্টিক সমুহ পুরোটাই রিসাইকেল করা হবে।এখানে ১৯টি বিভিন্ন ধরনের পন্য সামগ্রী।
সরেজমিনে দেখা যায়, টেকনাফ পৌরসভার চৌধুরীপাড়া বিজিবির সীমান্ত ফাঁড়ি মাঠে বিশাল একটি সুপারশপে নানা রকমের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের পসরা নিয়ে বসছে। বিভিন্ন বয়সের নারী, পুরুষ ও শিশুরা বস্তাভতি প্লাস্টিক নিয়ে দোকানের সামনে ভিড় করছেন। বাজারে ১ কেজি প্লাস্টিকের দাম ২০-৩০টাকা হলেও এ বাজারে সেটির প্রায় ৫০-৮০টাকা মুল্য দেয়া হচ্ছে। ১ কেজি প্লাস্টিক দিয়ে ১ কেজি চাল যেমন পাওয়া যাচ্ছে। তেমনি ৬টি ডিম পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ১ কেজি প্লাস্টিকের বিনিময়ে।প্রায় ১৯টি পণ্য থেকে নিজেরাই বাছাই করে কেনার সুযোগ পাচ্ছেন সাধারণ মানুষ।তেমনি সেন্টমার্টিন জেটি ঘাট সমুদ্রসৈকতে বালুচরে বসেছে প্লাস্টিকের বিনিময়ে বাজার কর্মসূচী। সেন্টমার্টিনের মানুষের কাছে প্লাস্টিকের কোনো মুল্য নেই।কারন সেখানে কোন ভাঙ্গারির দোকান নেই।নেই কোন রিসাইক্লিং ব্যবস্থাও। সেখানকার মানুষজন শতভাগ ভর্তুকি দিয়ে বাজার পাচ্ছেন।
টেকনাফের জালিয়াপাড়ার লাইলা বেগম বলেন, এ প্রথম দেখলাম প্লাস্টিকের পন্য দিয়ে খাদ্য সামগ্রীক পাওয়া যায়। বাড়ির আশেপাশে প্লাস্টিকের কুঁড়িয়ে এনে ৩কেজি চাল ও ৬টি ডিম পেয়েছি।
পণ্য কিনতে আসা একই এলাকার বাসিন্দা সোলতান আহমদ বলেন, পরিত্যক্ত প্লাস্টিক দিয়ে ঘরের জন্য চাল, আটা, তেল কিনে নিয়েছি।
সুপারশপের সদস্য মোহাম্মদ মোবারক বলেন,স্থানীয় বাসিন্দারা তাদের চাহিদা মতো পণ্য কিনতে পারছেন। টেকনাফে একদিনের জন্য হলেও সেন্টমার্টিনে এ স্টল থেকে আগামী চার মাস যাবৎ এসব পন্য কিনতে পারবেন লোকজন। তবে আজ টেকনাফ ও সেন্টমাটিনে ৭শতাধিক নারী, পুরুষ ও শিশুরা এসব নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য কিনেছেন।
টেকনাফ উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) আরিফ উল্লাহ নিজামী বলেন, একবিংশ শতাব্দীতে আমাদের অস্তিত্বের হুমকি হচ্ছে প্লাস্টিক। যে কোনো সমস্যা সমাধানে বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দেওয়া সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব হিসেবে আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। নদীমাতৃক এই দেশের প্রাণপ্রবাহ বাঁচিয়ে রাখার পাশাপাশি প্লাস্টিক দূষণে বিপন্ন প্রাণীকুলকে রক্ষা করা এখন সময়ের দাবি। এই পৃথিবীকে সম্পূর্ণ দূষণমুক্ত ও বসবাসযোগ্য রাখতে হলে সচেতনতা ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের পাশাপাশি আমাদের সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টার বিকল্প নেই। এ উদ্যোগকে স্বাগত জানায়।
বিদ্যানন্দের বোর্ড সদস্য মো: জামাল উদ্দিন বলেন, প্লাস্টিক দূষনের মাত্রা এতই ব্যাপক যে এটি সরকারের একার পক্ষে রোধ করা একেবারেই অসম্ভব। এই দূষন কমাতে দরকার ব্যাপক জনসচেতনতা ও জনসম্পৃক্ততা। তাই মানুষকে সম্পৃক্ত করতেই আমরা সারাদেশে প্লাস্টিক এক্সেঞ্জ স্টোর চালু করছি। এ বিষয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়কে আমরা অবহিত করেছি। আশা করছি, এই উদ্যোগের মাধ্যমে প্লাস্টিকের ভয়াবহতা সম্বন্ধে আমরা জনগনকে ধারনা দিতে পারব ও প্লাস্টিক দূষণ রোধে আমাদের এই আইডিয়া বাস্তবায়নে সরকারও এগিয়ে আসবে।
দেশব্যাপী এই প্রজেক্টে আর্থিক সহযোগিতা করেছে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশ।কক্সবাজার জেলায় এই প্রোগ্রাম বাস্তবায়নে সহযোগী করে যাচ্ছেন কক্সবাজার জেলা প্রশাসন।