অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০ দিন অতিবাহিত হয়েছে গত ১৫ নভেম্বর। এই ১০০ দিনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হিসেবে সবচেয়ে বেশি অপতথ্যের শিকার হয়েছে সেনাবাহিনী। আর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অপতথ্যের শিকার পুলিশ। তথ্য যাচাইকারী প্রতিষ্ঠান রিউমর স্ক্যানারের বিশ্লেষণে এই তথ্য ওঠে এসেছে।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের ক্ষমতাচ্যুতির পর ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। এই সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এর পর অভ্যুত্থান-পরবর্তী পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক করতে নিয়মিত বাহিনীগুলোর সঙ্গে মাঠে রয়েছে সেনাবাহিনী।
রিউমর স্ক্যানারের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, দেশের নাজুক পরিস্থিতিতে জানমালের নিরাপত্তায় সেনাবাহিনীসহ অন্যান্য বাহিনী যেমন সক্রিয় ভূমিকায় ছিল, তেমনি চেষ্টা ছিল পুলিশকে তার কাজে ফেরানোর। এত কিছুর মধ্যে এই বাহিনীকে জড়িয়ে অপতথ্যের প্রবাহও ছিল লক্ষ্য করার মতো।
খবরের কাগজের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
এই ১০০ দিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো বিশ্লেষণ করে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার। এই সময়ের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জড়িয়ে সর্বমোট ৭১টি অপতথ্য শনাক্ত করেছে প্রতিষ্ঠানটি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অপতথ্য ছড়ানো হয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে নিয়ে। এসব অপতথ্য গত ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে গত ১৫ নভেম্বরের মধ্যে শনাক্ত করা হয়।
এই সময়ে একক বাহিনী হিসেবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে জড়িয়ে ৪৭টি, বাংলাদেশ পুলিশের নামে ১৬টি, বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ, বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে জড়িয়ে একাধিক অপতথ্য প্রচার হয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অপতথ্য ছড়ানো হয়েছে ফেসবুকে। এর সংখ্যা ৫৯। এছাড়া ইউটিউবে ১৩টি, টিকটকে আটটি এবং এক্সে সাতটি অপতথ্য প্রচারের তথ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ৮৫ শতাংশ ক্ষেত্রেই এসব অপতথ্য নেটিজেনদের মধ্যে নেতিবাচক আর ১৫ শতাংশ ক্ষেত্রে ইতিবাচক বার্তা দেওয়ার সুযোগ রেখেছে।
তবে, এই সময়ের মধ্যে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন (র্যাব) এবং বাংলাদেশ বিমান বাহিনীকে নিয়ে কোনো অপতথ্য প্রচারের প্রমাণ পায়নি রিউমর স্ক্যানার।
অপতথ্যের প্রচারে নিয়মিতই জড়ানো হচ্ছে সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানকেও। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম ১০০ দিনে সেনাপ্রধানকে জড়িয়ে ১১টি অপতথ্যের প্রচার দেখেছে রিউমর স্ক্যানার।
পুলিশ নিয়ে অপতথ্য
গণঅভ্যুত্থানের পর দেশে পুলিশের কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দেয়। ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত পুলিশকে জড়িয়ে ১৩টি অপতথ্য প্রচার করা হয়েছে। তাছাড়া পুলিশের নতুন মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মো. ময়নুল ইসলামকে জড়িয়ে দুইটি, ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ গ্রেপ্তার হয়েছেন শীর্ষক ভুয়া একটি দাবি শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার।
পুলিশকে জড়িয়ে সবচেয়ে বেশি অপতথ্যের প্রচার দেখা গেছে ফেসবুকে। এর সংখ্যা ১৪টি। এছাড়া ইউটিউবে তিনটি, টিকটকে এবং এক্সে একটি করে অপতথ্য প্রচার হয়েছে।
পুলিশের বিষয়ে সবচেয়ে বেশি অপতথ্যের প্রচারে কাজে লাগানো হয়েছে মৃত্যুর ভুয়া তথ্য। গত ৩ আগস্ট সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানায় হামলায় ১৫ পুলিশ সদস্য নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে একজন গর্ভবতী নারী পুলিশ সদস্য ছিলেন এবং তাকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে শীর্ষক দাবিতে এক নারী পুলিশ সদস্যের ছবিসহ ফেসবুকে প্রচার করা হয়। পরবর্তীতে রিউমর স্ক্যানার অনুসন্ধানে জানায়, এনায়েতপুরে নিহত ১৫ জন পুলিশ সদস্যের মধ্যে কেউ নারী ছিলেন না এবং প্রচারিত ছবিটি ভিন্ন এক নারী পুলিশ সদস্যের। তিনি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশে কর্মরত। গত ১৩ আগস্ট সজীব ওয়াজেদ জয়ের এক্স অ্যাকাউন্টে প্রচারিত শেখ হাসিনার লিখিত বক্তব্যে এবং ১৪ আগস্ট বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাতের একটি টুইট পোস্টে এবং অক্টোবরে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের ফেসবুক পেজ থেকেও দাবিটি প্রচার হতে দেখে রিউমর স্ক্যানার। এছাড়া ছাত্র আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের দ্বারা তিন হাজার ২০৪ জন পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন শীর্ষক একটি ভুয়া দাবিও যুক্তরাষ্ট্রের টাইম ম্যাগাজিনের বরাতে ইন্টারনেট প্রচার করা হয়েছে, যার সত্যতা পায়নি রিউমর স্ক্যানার।
২৫ আগস্ট চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে সচিবালয় ঘেরাও করে আনসার। পরে আনসার সদস্যদের সঙ্গে ছাত্র-জনতার সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এর প্রেক্ষিতে সংঘর্ষের ঘটনায় আনসার সদস্যদের মৃত্যুর ভুয়া দাবি প্রচার করা হয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। এসব ভুয়া তথ্য প্রচারে ব্যবহার করা হয়েছে পুরোনো মৃতদেহের ছবিও। এই এক ইস্যুতে পাঁচটি অপতথ্য শনাক্ত করে রিউমর স্ক্যানার। এর সবগুলো অপতথ্যই ছড়িয়েছে ফেসবুকে।
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশকে (বিজিবি) জড়িয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০ দিনে দুইটি অপতথ্য প্রচার হয়েছে। এরমধ্যে একটি সেপ্টেম্বরে পাহাড়ি ও বাঙালিদের মধ্যে সংঘর্ষ ও হামলার ঘটনায় এবং অন্যটি গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. আজমত উল্লা খান বিজিবির হাতে আটকের ঘটনার ভুয়া দাবি।
নৌবাহিনী বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতীয় জেলেদের মাছ ধরতে বাঁধা দিচ্ছে শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করা হয়। যা ভুয়া হিসেবে চিহ্নিত করে রিউমর স্ক্যানার।