মৌসুমের শুরুতে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার পর স্বস্তি ফিরতে শুরু করেছে রাঙামাটির পর্যটনে। গেল চারমাসে রাজনৈতিক অস্থিরতা আর ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করায় পর্যটক খড়ায় পড়া পর্যটনকেন্দ্রিক ব্যবসা বাণিজ্যে নামে ধস। রাঙামাটি শহর, সাজেক ও কাপ্তাইয়ে কাংখিত পর্যটক না আসায় পর্যটনে ক্ষতি হয়েছে প্রায় দেড়শ কোটি টাকা। তবে মৌসুমের শুরুতেই ১ নভেম্বর থেকে পর্যটন উন্মুক্ত হওয়ায় ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার প্রত্যাশায় আছেন ব্যবসায়ীরা।
পাহাড়, ঝর্ণা আর হ্রদের শহর রাঙামাটি যেন মুগ্ধতার আরেক নাম প্রকৃতিপ্রেমিদের কাছে। তাই সারা বছরই পর্যটকদের কাছে আকর্ষনীয় রাঙামাটি। কিন্তু গেল জুলাই বিপ্লব থেকে রাজনৈতিক অস্থিরতায় পর্যটক খড়ায় পড়ে রাঙামাটি। এরমধ্যেই খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার জেরে ২৪ সেপ্টেম্বর থেকে ৩১ অক্টোবর পাঁচ দফায় রাঙামাটি ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করে জেলা প্রশাসন।
ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার পর স্বস্তি ফিরতে শুরু করেছে রাঙামাটির পর্যটনে। খুশি পর্যটকরাও। ঝুলন্ত সেতু এলাকায় কথা হলে ঢাকায় সাভার থেকে আসা পর্যটক মিনা আক্তার বললেন- খুবই সুন্দর রাঙামাটি। আমরা পরিবার নিয়ে প্রতিবছরই আসি। নৌভ্রমণ দারুণ লাগে। বারবার আসতে ইচ্ছে করে।
মো. জামশেদ বলেন, পাহাড় লেক অনেক ভালো লাগে। সুযোগ পেলেই চলে আসি। কিন্তু আন্দোলনের পর থেকে পাহাড়ে আসা হয় নাই আমাদের। খোলার পর বন্ধুূদের নিয়ে আসলাম। দারুণ লাগছে।
মাসুদ পারভেজ সবুজ বললেন, ঢাকা শহরে থাকি। মানুষের গাদাগাদির কারণে ভালো পরিবেশ পাওয়া যায় না। এজন্য প্রতিবছর রাঙামাটি, সাজেক একবার না আসলে মনটা ব্যাকুল হয়ে যায়।
আবাসিক হোটেল-রিসোর্ট, খাবারের দোকান (রেস্টুরেন্ট), পাহাড়িদের তৈরি টেক্সটাইল কাপড়, সড়ক ও নৌযান এবং বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান ঘিরেই মূলত রাঙামাটির পর্যটন বাণিজ্যের পাঁচ খাত। গেল চার মাসে এই পাঁচ খাতে দৈনিক এককোটি ২০ লাখ টাকা হিসেবে ক্ষতি হয়েছে প্রায় দেড়শ কোটি টাকা।
পর্যটক নির্ভর এসব ব্যবসা বাণিজ্যে ধস নামায় অর্থনেতিক সংকটে পড়েন খাত সংশ্লিষ্টরা। তবে ১ নভেম্বর থেকে পর্যটন উন্মুক্ত হওয়ায় স্বস্তি ফিরছে ব্যবসায়িদের।
রাঙামাটি আবাসিক হোটেল মালিক সমিতির যুগ্ম সম্পাদক মোস্তফা কামাল উদ্দিন বলেন- মৌসুমের শুরুতেই পর্যটন খুলে দেয়া হয়েছে। এখন পর্যটকদের ভালো সাড়া পাচ্ছি। শুক্র ও শনিবার ছুটির দিনে ৬০ থেকে ৬৫ শতাংশ আগাম বুকিং পেয়েছি। জুলাই বিপ্লব থেকে অক্টোবর পর্যন্ত গেল চারমাসে পর্যটন খাতে শত কোটি টাকার লোকসান হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে এই ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নিতে পারবো।
সাজেক হোটেল ও রিসোর্ট মালিক সমিতির সভাপতি সুপর্ণদেব বর্মণ বলেন- আমাদের রিসোর্টগুলো শুক্র ও শনিবার শতভাগ বুকিং হয়েছে। এখানে প্রায় সাড়ে চার হাজার পর্যটক রাত্রিযাপন করতে পারে। আশা করি এই মোসুমে ভালো ব্যবসা হবে।
রাঙামাটি পর্যটন হলিডে কমপ্লেক্সের ব্যবস্হাপক আলোক বিকাশ চাকমা বলেন, পর্যটকরা আসছেন। স্বস্তি ফিরতে শুরু করেছে এই খাতে। নানান সংকটে পড়ে গত চারমাস খুবই মন্দা গেছে। আশা করি, এই মৌসুমে ভালো আয় করতে পারবো।