শিরোনাম :
বড় ছেলে জিহাদ এর জন্মদিনে বাবা শামসুর অনুভূতি! মিথ্যা পরিচয়ে ফ্ল্যাট ভাড়া নেন আরসা নেতা আতাউল্লাহ গুম কমিশনে গিয়ে তথ্য দিলেন সাবেক সেনাপ্রধান ইকবাল করিম ভূঁইয়া বঙ্গবন্ধু সৈনিকলীগ নেতা ফেরদৌস কে আইনের আওতায় আনার দাবী অপহরণ নাটক সাজিয়ে টেকনাফে সাংবাদিকসহ ছয় জনের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা  সাবেক এমপি বদির সঙ্গে বিরোধে ক্রসফায়ারে খুন কাউন্সিলর একরাম টেকনাফের মাদক কারবারি জাহাঙ্গীর অ’স্ত্রসহ গ্রেফতার কোস্ট গার্ড-ডাকাতদলের গোলাগুলি, অস্ত্র-গুলিসহ একজন আটক পালংখালী জামায়াতের ইফতার মাহফিল সম্পন্ন কক্সবাজার কারাগারের জেলার আবু মুছার নেতৃত্বে চলছে দুর্নীতির মহোৎসব! 
শুক্রবার, ২১ মার্চ ২০২৫, ১০:৪৫ পূর্বাহ্ন
বিজ্ঞপ্তি :
আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম.... বিশ্বের যে কোন স্থান থেকে সকল প্রকার সংবাদ পেতে আমাদের ওয়েবসাইট www.teknaftv.com ভিজিট করুন। ধন্যবাদ!

মিয়ানমার থেকে স্রোতের মতো প্রবেশ করছে চোরাইপথে আসা গরু ও মহিষ

নিজস্ব প্রতিবেদক / ১৭৯ বার দেখা হয়েছে
আপডেট সময় : মঙ্গলবার, ৫ নভেম্বর, ২০২৪

্মিয়াননমার সীমান্তবর্তী বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি হয়ে কক্সবাজারের রামুর গর্জনিয়া বাজারস্থ পশু বিক্রির হাটে বানের স্রোতের মতো প্রবেশ করছে চোরাইপথে আসা গরু ও মহিষ। এসব গরু-মহিষ ‌‘বৈধ’ করতে ৫২ খামারির কাগজ ব্যবহার করার অভিযোগ উঠেছে। জানা যায়, খামারি পরিচয়ে এরা বেশিরভাগই গরু মহিষ ও মাদকসহ সীমান্ত পণ্য চোরাচালানের সাথে জড়িত। এ যেন সীমান্ত বাণিজ্যের অঘোষিত চোরাচালানের ট্রানজিট ঘাট।

 

দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে সীমান্তের অপর আলোচিত বৈধ ট্রানজিট ঘাট টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ করিডোর। ফলে কয়েক কোটি টাকা রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। পক্ষান্তরে রাজস্বের টাকা অবৈধ পন্থায় ঢুকে যাচ্ছে বাজার সিন্ডিকেটের পকেটে।

 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত থেকে সাত কিলোমিটার দূরে রামুর কচ্ছপিয়া ইউনিয়নের গর্জনিয়া বাজার। সেখান থেকে আধা কিলোমিটার এগিয়ে গেলে গর্জনিয়া পশু বিক্রির হাট। কোরবানির ঈদে এই হাট বেশ জমজমাট থাকে। সর্বশেষ বাজারের দিন বড়, ছোট ও মাঝারি মিলিয়ে ২০০টির মতো গরু-মহিষ উঠেছে এ হাটে। এর মধ্যে বেশিরভাগই মিয়ানমারের চোরাই গরু-মহিষ। যদিও দেশি গরু বলে এসব বিক্রি হচ্ছে গর্জনিয়ার হাটে। এছাড়াও কোনো ধরনের বাজার ইজারা নীতিমালা উপেক্ষা করে চলছে বাজারটি। বাজারে টাঙানো হয়নি কোনো রেইট চার্ট।

 

সীমান্তের বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, নাইক্ষ্যংছড়ির দুর্গম সীমান্ত দিয়ে রাতের আঁধারে প্রতিদিন বাংলাদেশে ঢুকছে মিয়ানমারের শত শত গরু। সোনাইছড়ি, চাকঢালা, মৌলভী কাটা, হাজীর পাড়া, জামছড়ি, কেঁয়াজুর বিল এবং নাইক্ষ্যংছড়ি লেকের লাইটের গোড়া হয়ে কক্সবাজারের রামুর গর্জনিয়া বাজারে পৌঁছে যায় চোরাচালানের গরু মহিষ। চোরাচালানের আরও কিছু গরু-মহিষ বিক্রি হয় নাইক্ষ্যংছড়ি ডেইরি ফার্ম থেকে। এরপর এই গরু-মহিষ বাজার থেকে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের ব্যবসায়ীরা কিনে নিচ্ছেন।

 

অনুসন্ধানে জানা যায়, চোরাই গরু-মহিষের কেনাবেচার সঙ্গে জড়িত রয়েছেন ডেইরি ফার্ম তথা খামারি পরিচধারী কচ্চপিয়া হাজীপাড়ার নজরুল ইসলাম, মোহাম্মদ আলী, গর্জনিয়া হাইস্কুল পাড়ার আমান উল্লাহ, জাফর আলম, হাজীর পাড়ার আবু ঈসা, বড় জামছড়ির আব্দুল্লাহ, ছুরুত আলী, শামসুল আলম, আব্দুল খালেক ও আব্দুস সালামসহ আরও বেশ কয়েকজন।

 

তাদের মধ্যে নজরুল, আলী এবং আমান উল্লাহর বিরুদ্ধে মাদক পাচার ও বিক্রির অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান-সদস্য থেকে শুরু করে স্থানীয় রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে বাজার সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ এবং গরু-মহিষের অবৈধ চোরাচালানের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে।

জানা যায়, এই অবৈধ গরু পাচারকে ঘিরে গত কয়েক মাসে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। বিজিবির সঙ্গে চোরা কারবারিদের গোলাগুলিতে হতাহতের ঘটনাও ঘটছে। কিন্তু চোরাচালান বন্ধ করতে পারছে না সরকারি সংস্থাগুলো।

সীমান্ত ও স্থানীয় সূত্র বলছে, গত এপ্রিল থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত সীমান্ত দিয়ে এপারে কয়েক লাখ চোরাই গরু ঢুকেছে। এপ্রিল মে মাসে ঢুকেছে ৭০ হাজারের বেশি। জুন মাসে ঢুকেছে ৫০ হাজারের বেশি গরু-মহিষ। আনুপাতিক হারে একইভাবে জুলাই এবং আগস্ট মাসেও বানের স্রোতের মতো ঢুকেছে গরু-মহিষ।

 

মিয়ানমার থেকে আসা এসব গরুর শরীরে সাংকেতিক চিহ্নের সিল মারা থাকে। গর্জনিয়া বাজারে তোলার আগে রাসায়নিক দ্রব্য দিয়ে সেই সিল মুছে ফেলার চেষ্টা চলে। তারপরও কিছু গায়ে সিলের চিহ্ন সামান্য থেকে যায়। মিয়ানমারের পাচারকারীরা গণনার সুবিধার্থে এই সিল লাগিয়ে দেয় বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন।

 

সম্প্রতিক বাজারের দিন গর্জনিয়া হাটে মিয়ানমারের ১৩টি মাঝারি গরু বিক্রি করেন মৌলভী কাটার বাসিন্দা মো. ফরিদ। এসব গরু চোরাকারবারিদের কাছ থেকে কম দামে কিনে বাজারে বিক্রি করতে এসেছেন বলে জানান তিনি। চোরাই গরু বিক্রির কারণ জানতে চাইলে ফরিদ বলেন, গরু মিয়ানমারের হলেও তিনি বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে কিনেছেন। এছাড়াও যেভাবে সস্তায় চোরাচালানের গরু মিলছে এতে প্রকৃত খামারিরা গরু বাজারজাত করণ ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছে।

 

গর্জনিয়া বাজার ইজারাদার (একাংশ) ইউপি সদস্য শাকিল প্রতিবেদকের কাছে স্বীকার করে বলেন, এই বাজারে প্রায় সব গরু-মহিষই মায়ানমারের। এগুলো চোরাচালানের মাধ্যমেই এসেছে। আর এখানে যেভাবে চোরাচালানের পশু সস্তায় পাওয়া যায় ফলে খামারিরা গরু উৎপাদন করার কোনো যৌক্তিকতাই থাকে না।

 

যোগাযোগ করা হলে কচ্ছপিয়ার ইউপি চেয়ারম্যান আবু নোমান জানান, চোরাচালানের গরু বাজারে ঢুকছে এটা সত্য। কিন্ত প্রশাসন যদি সীমান্তে চোরাচালান না ঠেকায় তাহলে এর দায় কে নিবে? স্থানীয় সাবেক এমপি কমলও বিষয়টি জানতেন বলে দাবি করেন এ ইউপি চেয়ারম্যান।

 

নাম প্রকাশ না করে একাধিক স্থানীয় বাসিন্দা জানান, রামু থানার গর্জনিয়া ফাঁড়ি, নাইক্ষ্যংছড়ি থানা এবং ইউএনও এসব গরু পাচারকারীদের নিকট থেকে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে থাকেন। ফলে খামারিরা এখন পথে বসেছে এবং ক্ষতি পুষিয়ে নিতে বাধ্য হয়ে গরু মহিষ চোরাচালানের ব্যবসায় ঝুঁকেছে কেউ কেউ।

তবে ইউপি চেয়ারম্যান আবু নোমানের ভাতিজা নজরুল এই অঞ্চলের শীর্ষ চোরাকারবারি এবং মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে খ্যাত। তার নেতৃত্বেই এই সীমান্তে অবৈধ চোরাচালান বাণিজ্য নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে বলে জানা গেছে।

 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গরুর পাল বাংলাদেশের ভূখণ্ডে আনার পর দুর্গম সীমান্তের পাহাড়, জঙ্গল ও সামাজিক বনায়নের ভেতর জড়ো করা হয়।তারপর সময়-সুযোগ বুঝে ২০ থেকে ৫০টি গরুর পাল আনা হয় ঘুমধুম সীমান্তঘেঁষা চাকঢালা ও তুমব্রু টিভি টাওয়ার সড়ক দিয়ে। সেখান থেকে পাহাড়ি পথে গরু আনা হয় সাত কিলোমিটার দূরের কক্সবাজারের রামুর কচ্ছপিয়া ইউনিয়নের গর্জনিয়া বাজারে। গর্জনিয়া বাজার থেকেই চোরাই গরু ছড়িয়ে পড়ে রামুতে। সেখান থেকে গরুগুলো ট্রাকযোগে পৌঁছানো হয় জেলার বিভিন্ন পশুর হাটে। কিছু গরু সরবরাহ করা হয় চট্টগ্রামের সাতকানিয়া, লোহাগড়া, আনোয়ারা, বাঁশখালীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।

অভিযোগ রয়েছে, নাইক্ষ্যংছড়ি সদরের ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানসহ কয়েকজন জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতা মূলত চোরাই গরু আনার ক্ষেত্রে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করেন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এজাতীয় আরো নিউজ দেখুন
error: Content is protected !!
error: Content is protected !!