মিয়ানমারে আরকান আর্মি ও বিদ্রোহী গোষ্ঠীর নির্যাতনের বর্ণনা দিতে গিয়ে দুচোখের পানি ধরে রাখতে পারছেন না মিয়ানমারে থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা।
আমাদের ও তো বেঁচে থাকার ইচ্ছা আছে। আর কত নির্যাতন সহ্য করবো। আমরাও তো মানুষ। আমাদের ও তো একটা জীবন আছে। আমাদের ও তো অনেক স্বপ্ন আছে। আমাদেরও তো মা, বাবা, ছেলে, মেয়ে আত্মীয় স্বজন রয়েছে ।
কেন এইরকম একটি দেশে আমাদের জন্মগ্রহণ হয়েছে জানি না। এই দেশে আছে শুধু হানাহানি, মারামারি, হত্যা গুম, খুন নির্যাতন ছাড়া আর কিছুই নেই।
১/রোহিঙ্গা নারী আরফা বেগম বলেন, মিয়ানমারের অবস্থায় বেশি খারাপ আমাদেরকে অনেক জুলুম নির্যাতন করেছে আরকান আর্মি। আমাদেরকে অনেকগুলি মারতেছে তাই আমরা সাগর পাড়ে এসে আমরা চলে আছি। পরে একটা বাংলাদেশী নৌকা নিয়ে আমরা এপারে চলে আসছি। তারা দুই গ্রুপের সংঘর্ষে মুসলমানরা মারা যাচ্ছে। সে জন্য আমাদের চলে আসতে হয়েছে। আমার ভাতিজা সহ শত সৎ মানুষ গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছে আমাদের সামনে। শত শত মানুষ যখন মারা যাচ্ছে তখন আমরা নৌকা নিয়ে এই পারে চলে আসি।
২/ রোহিঙ্গা সৈয়দুল আমিন বলেন, দুই গ্রুপের লড়াই চলছে অনেক মানুষ মারা যাচ্ছে, অনেকে না খেয়ে মারা যাচ্ছে। বেশি গুলি মিসাইল, মর্টারশেল ও বড় বড় বোমার মারতেছে। আমরা না খেয়ে অনেকদিন থাকছি। সে জন্য আমরা চলে আসছি। চলে আসার সময় অনেক মানুষ মারা গেছে আমার মা বাবা কোথায় গেছে আমরা জানি না। যে যেখান থেকে পারছে সেখান থেকে নৌকা নিয়ে চলে আসছে। আসার সময় অনেক কষ্ট পেয়েছি। এইখানে ও অনেক কষ্ট পাচ্ছি ঠিকমত খেতে পারছি না খাওয়ার জন্য কিছু পাচ্ছিনা। কোন রকম আত্মীয়-স্বজনের বাসায় আশ্রয় নিয়েছি। তারা কিছু কিছু সাহায্য করছে। সে গুলো খেয়ে বেঁচে আছি। আমার মা-বাবাকেও খুঁজে পাচ্ছিনা। মিয়ানমারে আমাদের ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া করা মতো কিছু নেই। তাই আমরা বাধ্য হয়ে চলে আসছি।
৩/ রোহিঙ্গা আমিনা খাতুন বলেন, আমরা আসার সময় অনেক কষ্ট পেয়েছি। আমরা প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশের চলা আছি। বাড়িঘর ধনসম্পদ সবকিছু শেষ হয়ে গেছে। বাড়ি থেকে এক জোড়া কাপড়ও আনতে পারিনি। গায়ের কাপড় গুলো নিয়ে অস্ত্রের মুখামুখি থেকে চলে আসছি। সাগরে ঝাঁপ দেওয়ার জন্য আসছিলাম। হঠাৎ একটা নৌকা পাইছি সেই নৌকা দিয়ে চলে আসছি।
৪/ রোহিঙ্গা হাফেজ আহমদ বলেন, আমাদের এলাকায় থাকতে পারতেছি না আরকান আর্মির কারণে। আরকান আর্মি যখন গুলি মারে তখন বিদ্রোহী গোষ্ঠী আমাদের এলাকায় বাড়ি ঢুকে পড়ে। যখন তারা ঢুকে পড়ে। তখন আরো বেশি বেশি বেশি গুলি মিসাইল, মর্টারশেল মারতে থাকে।
গুলি মারার কারণে এক পরিবার থেকে পাঁচজন দুইজন প্রতিদিন মারা যাচ্ছে। দিন দিন যখন মানুষ মারা যাচ্ছে ঘরবাড়ি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বেশি যখন ক্ষতি হচ্ছে তখন আমরা বাড়ি ঘর ছেড়ে অন্য এলাকায় আশ্রয় নিয়েছি। সেখান থেকে খালের পাশে চলে আসলাম বাংলাদেশে চলে আসার জন্য কয়েক শত জন জড়ো হলে হঠাৎ রাত ১২ টায় বড় বড় বুমা মটার্শেল মারলে প্রায় এক শত মতো রোহিঙ্গা আমাদের সামনে মারা যায়। পরে এদিক ওদিক ছোটাছুটি করে মৃত মানুষের গায়ের উপর দিয়ে আমরা আবার এলাকায় ঢুকে পড়ি। আবার যখন বেশি গোলাগুলি হচ্ছে তখন আমরা পেরামপুরে গ্রামে চলে এসেছি। ওইখানেও আরকান আর্মি থাকতে দিচ্ছে না। তারা বলেন তোমরা যেখানে ইচ্ছা সেখানে চলে যাও। তখন আমরা বাংলাদেশ চলে আসার জন্য লাল দ্বীপে আশ্রয় নিয়েছি। সেখানে ৫ দিন মত না খেয়ে থাকছি। খেতে না ফেরে ছেলে মেয়েরা গড়াগড়ি করতেছে। ছেলে মেয়েদের কে কিছ খেতে না পেরে লবণ পানি খেয়ে বেঁচে আছে। আমাদের কি অবস্থা হবে বলে আল্লাহর কাছে অনেক দোয়া করেছি। অনেক কষ্টের বিনিময়ে বাংলাদেশে পৌঁছেছি।
৫/ রোহিঙ্গা নারী গুরা বানু বলেন, আর্কান আর্মি ও আর্সার সাথে গুলা গুলি হয়েছে। আর্কার আর্মি গুলা গুলির কারণে পালিয়ে চলে আসার সময় আমার স্বামী সন্তান কে হারিয়ে ফেলেছি। বেঁচে আছে নাকি মারা গেছে জানি না। চলে আসার সময় খুঁজে পাইনি। আর্কার আর্মি বেশি নির্যাতন করতেছে। খাওয়া-দাওয়ার কোন কিছু নেই, অনেক দিন না খেয়ে থাকতে হয়েছে। আমার স্বামী সন্তান কে একজন কে একজন খোঁজে পাইনি।
৬ নং রোহিঙ্গা আনোয়ার বলেন,আমরা অনেক কষ্ট ছিলাম আমরা ডেইল পাড়া গ্রামে ছিলাম।
অনেক দিন না খেয়ে থাকতে হয়েছে । আমরা অনেক জুলুম নির্যাতনে ছিলাম। মানুষের মৃত্যু দেখে অনেকেই চলে আসতেছে। চলে আসার সময় অনেকেই সাগরে নৌকা ডুবে মারা যাচ্ছে দেখেছি।
রোহিঙ্গা বদরুল মাঝি বলেন, যদি পারতাম এইখান থেকে সবাই চলে যায়তাম, এইখানে এক মুহূর্তের জন্য ও থাকতে ইচ্ছে করছে না। আমাদের মজলুম জাতি কে দিন দিন নির্বিচারে হত্যা করা হচ্ছে। নির্যাতন জুলুম করা হচ্ছে। আর সহ্য করতে পারছি না। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অনেক গুলিবিদ্ধ আশ্রয় নিয়েছে। এইখানে ও অনেক কষ্টে দিনযাপন করছে। একবেলা খেতে পারলে আরেক বেলা খেতে পারছেন না।
স্থানীয় সচেতন মহল জানান,আমরা মানবতা দেখিয়ে তাদেরকে আশ্রয় দিয়েছি। কিছু কিছু খারাপ রোহিঙ্গাদের কারণে টেকনাফ তথা কক্সবাজার হুমকির মুখে পড়েছে । রোহিঙ্গারা প্রকাশ্যে দিনে রাতে অবাধে চলাফেরা করার সুযোগ পাওয়ার কারণে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড জড়িয়ে যাচ্ছে। রোহিঙ্গারা ক্যাম্পের বাহিরে যাওয়ার সুযোগ না ফেলে অনেক অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড কমে আসবে বলে মনে করেন।